প্রকাশিত: / বার পড়া হয়েছে
নোয়াখালী জেলা, সেনবাগ উপজেলার সেবার হাট বাজারে তাকওয়া ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ডাক্তার মতিউর রহমান রুবেলের ভূল চিকিৎসায় জান্নাতুল ফেরদৌস রিমু নামে ১৪ বছরের এক কিশোরী মৃত্যুর অভিযোগ পাওয়া গেছে।
নিহত জান্নাতুল ফেরদৌস রিমু (১৪), নোয়াখালী জেলা, সেনবাগ উপজেলা, সেবার হাট, ধর্মপুর গ্রামের আবদুর রহমান মোলভী বাড়ির মো: হানিফের মেয়ে।
অনুসন্ধান করে জানা যায়, গত ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪ ইং তারিখে পেটে ব্যাথা নিয়ে তাকওয়া ডায়াগনস্টিকে ডাক্তার রুবেলের কাছে নিয়ে যান স্বজনরা। রিমুর পিতা ও মাতা অভিযোগ করে বলেন, ডাক্তার রুবেল নিহত রিমুর পেটে ব্যাথার কথা শুনে ওজন পরিক্ষা করে ৪ টি ইনজেকশন সহ কিছু ঔষধ ফার্মেসী হতে আনতে বলে, পরে ডাক্তার রুবেল পর পর ৪ টি ইনজেকশন রিমুর শরীরে পুশিং করে এবং তার ডায়াগনস্টিকে ভর্তি থাকতে বলে, সন্ধার আগে ব্যথা কিছুটা কমলে তিনি রুগীর পরিবার কে প্রেসক্রিপশন লিখে দিয়ে আস্বস্ত করে বলেন বাড়ি নিয়ে যান, রোগী ঠিক হয়ে যাবে।
বাড়িতে যাওয়ার পর রোগীর আবার তীব্র ব্যাথা শুরু হয়, কোন রকম রাত টা পার করে পর দিন ৩০ ডিসেম্বর রোগীকে আবারো ডাক্তার রুবেলের কাছে তাকওয়া ডায়াগনস্টিকে নিয়ে যান, ডাক্তার রোগীর শরীরে চিকেন ফক্স এর লক্ষন দেখে, ২৯ তারিখের প্রেসক্রিপশন রেখে দিয়ে নতুন করে ইনজেকশন সহ আরো কিছু ঔষধ আনতে বলেন।
রিমুর মাতা সেবার হাট সোনালী ফার্মেসী হতে ইনজেকশন ও স্যালাইন আনলে, ডাক্তার রুবেল স্যালাইনের সাথে আরো ৫ টি ইনজেকশন পুশিং করেন। সেদিন রিমুর স্কুলে বার্ষিক পরিক্ষার ফলাফল দিবে তাই স্যালাইন শেষ হওয়ার পর রিমু রেজাল্ট দেখতে মাকে নিয়ে স্কুলে যায়, ডাক্তার রুব েল ২৯ তারিখের প্রেসক্রিপশন রেখে ৩০ তারিখের নতুন প্রেসক্রিপশন দিয়ে রোগীকে বিদায় করেন, স্কুলে গিয়ে রিমু ব্যাথায় অসুস্থ ও দূর্বল হয়ে পড়ে, পর দিন ৩১ তারিখে আবার ও রিমুকে নিয়ে রুবেল ডাক্তারের কাছে যায় এবং রিমুর মা বলেন আপনি আমার মেয়েকে ভাল করতে না পারলে বলেন আমরা অন্য ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাই। এতে ডাক্তার রুবেল বলেন আমি যে চিকিৎসা দিয়েছি সেটা বাংলাদেশের যেখানেই নেন না কেন ফেলতে পারবে না। এবং আমি যে চিকিৎসা দিয়েছি ৮ ঘন্টার মধ্যে অন্য কোন চিকিৎসা করা যাবে না।
রোগীর স্বজনরা মেয়ের অবস্থা খারাপ দেখে দাগনভূঞা উপজেলা হাসপাতালে নিলে পরিক্ষা নিরীক্ষা করে তার শরীরে ডেঙ্গুর আলামত পান।
তখন রোগীর প্লাটিলেট ৪০ হাজারে নেমে আসে। দাগনভূঞা উপজেলা হাসপাতাল এই অবস্থায় রোগীকে না রেখে ঢাকা বা চট্টগ্রাম নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন।
চট্টগ্রাম মেডিকেলে মুমূর্ষু অবস্থায় ভর্তি করানোর পর ডাক্তার রা দফায় দফায় মেডিকেল বোর্ড গঠন করে রোগীর বিভিন্ন বিষয় পরিক্ষা নিরীক্ষা করে রোগীর অভিভাবক কে জিজ্ঞেস করেন প্রথম থেকে কোথায় চিকিৎসা নেন? এবং রোগ না বুজে ভুল ট্রিটমেন্টে রোগীর অবস্থা সংকটাপন্ন বলে জানান।
রোগীকে আইসিউতে রাখার পরামর্শ দিলে, রিমুর পিতা আর্থিক ভাবে অসচ্ছল থাকায় আইসিউতে ভর্তি না রেখে বাড়িতে নিয়ে আসলে ৬ জানুয়ারী রিমু মৃত্যু বরন করেন।
এই বিষয়ে অভিযুক্ত ডাক্তার রুবেল বলেন ৩০ তারিখে আমার কাছে পেটে ব্যাথা নিয়ে আসলে আমি রোগীকে রোলাক ইনজেকশন সহ কিছু ঔষধ দি, ৩ দিনে ১০-১২ টি টি ইনজেকশনের বিষয় টি মিথ্যা এবং বানোয়াট। রোগীর স্বজনরা ২৯ ডিসেম্বর প্রথম ডা: রুবেলের কাছে আসার কথাটি অস্বীকার করেন এবং ৩০ ও ৩১ তারিখের প্রেসক্রিপশন নয়াকাল টিম কে দেখান। এই বিষয়ে সত্যতা যাচাই করতে চাইলে সিসিটিভি ফুটেজ দেখতে বলেন, কিন্তু সি সি টিভি ফুটেজ দেখাতে বা দিতে গড়ি মসি করছেন ডা: রুবেল।
এই বিষয়ে নোয়াখালী সিভিল সার্জন ডা: মাসুম ইফতেখারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি সেবার হাট তাকওয়া ডায়াগনস্টিক এর ডাক্তার রুবেলের বিরুদ্ধে একটা অভিযোগ পেয়েছি, তবে প্রাথমিক ধারনা রোগী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা যেতে পারে, সময়ের কারনে তদন্ত করতে দেরী হচ্ছে, অল্প কিছু দিনের মধ্যে আমরা পূর্নাঙ্গ তদন্ত করে ব্যাবস্থা নিব।
তাকওয়া ডায়াগনস্টিক সেন্টার এ ডাক্তার রুবেলের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত মেডিসিন ও এন্টিবায়োটিক প্রয়োগ, রোগী ধরে রাখা, অপেশাদার আচরন সহ আরও কিছু অভিযোগ পাওয়া গেছে।
তাকওয়া ডায়াগনস্টিক নামে হলেও কাজে তেমন কোন আলামত পাওয়া যায়নি, অবজারভেশনেের নামে রোগী ভর্তি রাখার অভিযোগ ও আলামত পাওয়া যায়।
মেডিকেল টেকনোলজিস্ট হিসাবে যাকে রাখা হয়েছে তার শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেট নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।
ডায়াগনস্টিকের আড়ালে ক্লিনিকের কার্যক্রম পরিচালনা করা, একাই সব কিছু সামাল দেয়া সহ নানান অভিযোগ তাকওয়া ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক ডাক্তার মতিউর রহমান রুবেলের বিরুদ্ধে।